কাপাসিয়ায় ইদ্রিস হত্যা মামলার মূল আসামি গ্রেফতার

গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের সালুয়াটেকি এলাকার বহুল আলোচিত ইদ্রিস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর।

মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী গফরগাঁও উপজেলার টাঙ্গাব গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছেলে মোঃ মেজবাহ উদ্দিন (১৯) গত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাত অনুমান ১৭.৩০ ঘটিকায় গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানা সীমান্তবর্তী টোক ফেরিঘাট ব্রিজের উপর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য ২৫/০৮/২০২০ তারিখ সকাল ০৮.০০ ঘটিকায় উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে ইদ্রিস আলী (৩০) এর মৃতদেহ সালুয়াটেকি সাকিনস্থ এজাহারনামীয় ১নং আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর নানার বাড়ীর দক্ষিণ পাশে পুকুর পাড়ে গলায় ধারালো অস্ত্র দ্বারা গুরুতর জখম অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সংক্রান্তে নিহতের মাতা মোর্শেদা বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় এজাহারনামীয় ১০ জন ও অজ্ঞাতনামা ০৩/০৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় মামলা নং-২৮, তারিখ-২৫/০৮/২০২০ ইং ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করেন।

মামলাটি কাপাসিয়া থানা পুলিশ প্রায় ০৪ মাস তদন্ত করে এবং তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার মাধ্যমে পিবিআই গাজীপুর জেলায় পরবর্তী তদন্তের জন্য প্রেরণ করে।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এজাহারনামীয় ১নং আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর সাথে তার নানার বাড়ীর সম্পত্তির ওয়ারিশ নিয়ে তার মামা রবিন ভূইয়া এর সাথে বিরোধ দেখা দেয়। ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিক এজাহারনামীয় ১নং আসামী জাহিদের পক্ষ নিয়ে তাকে মামা বাড়ীর সম্পত্তি দখলে সহযোগীতা করে।

পরবর্তীতে আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর সাথে ইদ্রিস এর মনোমালিন্য হলে ইদ্রিস আলী আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর মামা রবিন ভূঁইয়ার সাথে যোগ দেয়। পরবর্তীতে ঘটনার ০৩ (তিন) দিন আগে ঘটনাস্থলের পাশে এজাহারে উল্লেখিত আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে টোক বাইপাসে ভিকটিম ইদ্রিসকে ভয় দেখায়।

এই সুযোগে এজাহারে উল্লেখিত আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর মামা রবিন ভূইয়া তার সহযোগী আসামীদের নিয়ে পরিকল্পনা করে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মেজবাহ উদ্দিনকে দিয়ে ঘটনার দিন রাত ০২:০০ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থলে ডেকে আনার জন্য পরিকল্পনা করে।

উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী মেজবাহ উদ্দিন ঘটনার দিন রাত ০২:০০ ঘটিকার সময় সু-কৌশলে ভিকটিম ইদ্রিস আলীকে অত্র মামলার ঘটনাস্থল রবিন ভূইয়ার বাড়ীতে নিয়ে আসে। পূর্ব থেকে উক্ত স্থানে অবস্থানরত ঘটনায় জড়িত আসামীরা রবিন ভূইয়ার নিকট থেকে ১২ লক্ষ টাকা চুক্তির বিনিময় গলা চেপে ধরে ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে ও এলোপাথারীভাবে মারপিট করে ইদ্রিসকে হত্যা করে এজাহারে উল্লেখিত আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর নানা বাড়ীর যে ঘরে মাঝে মধ্যে সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ ঘুমাতো ঐ ঘরের পিছনে পুকুরপাড়ে ঘটনাস্থলে ইদ্রিস এর মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।

এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন এজাহারে উল্লেখিত জহির আহসান জাহিদ তার মায়ের ওয়ারিশ প্রাপ্ত সম্পত্তি নেওয়া জন্য তার মামা রবিন ভূইয়াকে বললে তার মামা রাজি না হওয়ায়  সে স্থানীয় রফিক এবং রফিকের ভাগিনা ভিকটিম ইদ্রিস আলীর সহযোগীতা নেয়। এই সুযোগে ভিকটিম ইদ্রিস আলী জাহিদের দখলকৃত সম্পত্তি বিক্রয়ের কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এজাহারনামীয় আসামী জাহিদের কথা বলে তার অগোচরে টাকা নেয়। এই বিষয়টি জাহিদ বুঝতে পারায় ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিকের সাথে তার বিরোধ হয়। ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিক পুনরায় এজাহার নামীয় আসামী জাহিদের মামা রবিন ভূইয়ার পক্ষ অবলম্বন করে। পরবর্তীতে রবিন ভূইয়া তার পৈত্রিক সম্পত্তি তার ভাগ্নে এজাহারনামীয় আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ কে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মেজবাহ উদ্দিনের সহযোগীতায় ভিকটিম ইদ্রিস আলীকে ডেকে এনে তার সহযোগী আসামীদের দিয়ে ভিকটিম ইদ্রিসকে হত্যা করে মৃত দেহ রবিন ভূঁইয়ার নিজের বাড়ীর যে ঘরে মাঝে মধ্যে সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ ঘুমাতো ঐ ঘরের পিছনে পুকুরপাড়ে ঘটনাস্থলে ইদ্রিস এর মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।

আসামী মোঃ মেজবাহ উদ্দিন (১৯), পিতা-মোঃ আফতাব উদ্দিন, মাতা-শাহনাজ পারভীন, সাং-টাঙ্গাব, থানা-পাগলা, উপজেলা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহকে ০৬/০২/২০২২ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে উক্ত আসামী নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ও পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, গ্রেফতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share & Like
Share & Like