দাফনের ৮ মাস পর তোলা হলো নারীর মরদেহ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি।।
দাফনের আট মাস পর আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা হয়েছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা সুরাইয়া বেগমের মরদেহ।
সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুরামপুর এলাকার একটি কবরস্থান থেকে শনিবার দুপুরে মরদেহটি তোলা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার রিমা, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. কাশেমসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
৩৯ বছর বয়সী সুরাইয়া বেগম ওই এলাকারই সুলতান মাহমুদের স্ত্রী ছিলেন। সুলতান শ্রমিকের কাজ করেন।
মামলার বরাতে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সুরাইয়া বেগমের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর পারিবারিক গোরস্তানে তাড়াহুড়ো করে স্ত্রীর মরদেহ দাফন করেন সুলতানসহ তার পরিবারের লোকজন।
কিন্তু সুরাইয়ার মৃত্যুর তিন দিন পর জানাজানি হয়, আছিয়া খাতুন নামে এক নারীকে বিয়ে করেছেন সুলতান। তখনই দুই ছেলে সবুজ, আকাশসহ সুলতানের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সন্দেহ হয়- আগের স্ত্রী সুরাইয়াকে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন তিনি। তবে এ ঘটনায় মামলা না করতে দুই ছেলেসহ শ্যালকদের ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন সুলতান ও তার পরিবার। এভাবে চলে যায় কয়েক মাস।
এ ঘটনায় গত ২৬ মে সুরাইয়ার ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে সুলতান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী আছিয়া খাতুনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এর পরই পালিয়ে যান সুলতান।
ওসি শাহ কামাল বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ ও র্যাব নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছিল। গত ২৭ আগস্ট সদর উপজেলা থেকে আছিয়াসহ সুলতানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করলে এক দিন মঞ্জুর হয়। আসামিরা বর্তমানে কারাগারে আছে।’
দীর্ঘ আট মাস পর এবার আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি।
নিহতের বড় ছেলে মো. সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আকাশের বিয়ের ঘটক ছিলেন আছিয়া নামের ওই নারী। এ জন্য মাঝেমধ্যেই বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন তিনি। একপর্যায়ে আমার বাবার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা নিয়মিত মোবাইলে কথা বলতেন। বিষয়টি আমার মা জানতে পেরে বাবাকে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হন তিনি।’
সবুজ আরও বলেন, ‘মা মানসম্মানের কথা চিন্তা করে বাবার পরকীয়ার ঘটনা গোপন রেখেছিলেন। ওই নারীর জন্যই আমার মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে বলা হয়েছে- স্ট্রোক করে মৃত্যু হয়েছে। আমি মায়ের হত্যার বিচার চাই।’
মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মৃত্যুর খবর পেয়ে দ্রুত বাড়িতে ছুটে গিয়ে দেখি বোনের মুখ ফোলা, কিছুটা রক্ত বের হচ্ছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা বুঝতে পেরেও তাদের দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পুলিশকে জানাইনি। এ সুযোগে সুলতানসহ তার পরিবার তাড়াহুড়ো করে আমার বোনের দাফন সম্পন্ন করে। কিন্তু যখন জানতে পেরেছি সুলতান বিয়ে করেছে, তখনই আমরাসহ তার সন্তানরাও শতভাগ নিশ্চিত হয়েছি আছিয়ার জন্যই সুরাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে।’