কলামাকান্দায় এলাকাবাসীর অর্থায়নে কাঠের ব্রীজ নির্মাণ অবৈধভাবে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে

 

কলমাকান্দা থেকে রীনা হায়াৎ:

স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থী, কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ এবং স্থানীয়দের যাতায়াতের সুবিধার্থে নিজস্ব অর্থায়নে নদীর উপর কাঠের ব্রীজ নির্মাণ করেন এলাকাবাসী। সেই ব্রীজ থেকে অবৈধভাবে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিগণের বিরুদ্ধে।
বুধবার (০৩ এপ্রিল) সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে নাম না প্রকাশের শর্তে বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ বলেন, এই ব্রীজকে কেন্দ্র করে এরমধ্যেই মারামারি ও মামলা- মোকদ্দমা হয়েছে। ভবিয্যতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে পারে আশঙ্কা করছেন তারা।
এরআগে গত সোমবার নেত্রকোনা কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লেঙ্গুরা ইউপি (ইউনিয়ন) চেয়ারম্যানের সুপারিশ নিয়ে এ বিষয়ে শিবপুর গ্রামের এলাকাবাসীর পক্ষে মকগুল ইসলামের ছেলে আমির হোসেন, ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হোসেন আলীসহ আরও অনেকের স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রটি জমা দেওয়া হয়। অভিযোগকারীদের অভিযোগে উল্লেখ যে , রাধানগর, জিগাতলা, মানিকপুর গ্রাম থেকে স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থী, অসহায় রোগীদের কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ ও স্থানীয়দের যাতায়াতের সুবিধার্থে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সহায়তায় রাধানগর থেকে শিবপুরগামী রাস্তা বরাবর কাউবাড়ি নদীর উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ব্রীজ নির্মান করা হয়। নির্মানের পর থেকে একদল চাঁদাবাজ অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন শুরু করে। এতে বাঁধা দিলে শিবপুর গ্রামের মো. হযরত আলীর হুকুমে আতাব উদ্দিন, মো. ইউনুছ আলী, মো. শরীফুল, মো. রইছ উদ্দিন, মো. আরিফুল, মো. রতন মিয়া, মো. আবু রায়হান, মো. নাছির উদ্দিন, ইয়ামিনসহ আরো অনেক ব্যক্তি লাঠিশোঠা ও দাঁড়ালো অস্ত্র দিয়ে একজনকে রক্তাক্ত জখম করেন।
পরবর্তীতে আহত ব্যক্তিকে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। সে সময় পুলিশের দারোগা মামলা তদন্ত করতে আসলে ব্রীজটি উন্মুক্ত এবং কেউ চাঁদা তোলতে পারবে না বলে যান। এরপরেও ব্রীজের উপর দিয়ে যাতায়াতকারীদের কাছ থেকে ফের টাকা নেওয়া শুরু হয়। চাঁদাবাজরা বলে টাকা উত্তোলন করতে না পারলে এই ব্রীজ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে এবং যারা বাঁধা দিবে তাদেরকে হত্যার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় হত্যাসহ বড় ধরণের সংঘর্ষের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে ব্রীজটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবী জানান অভিযোগকারীরা।
এবিষয়ে লেঙ্গুরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, এলাকার ১০ জনের অর্থের বিনিময়ে স্থানীয়ভাবে ব্রীজটি নির্মিত হয়। এ ব্রীজ দিয়ে যাতায়াতে দুই পাড়ের জনগণকে চাঁদা দিতে হয়। ব্রীজটি উন্মুক্ত রাখার জন্য এলাকাবাসী ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
অভিযোগকারীদের মধ্যে আমির হোসেন বলেন, প্রায় চার মাস আগে এলাকার ১৫-২০ জন মিলে ১১৮ ফুট লম্বা ও সাড়ে পাঁচ ফুট প্র্রশস্থের ব্রীজটি প্রায় এক লক্ষ ৪৬ হাজার টাকায় নির্মান করা হয়। আমিও ১২ জনের কমিটির একজন ছিলাম। এরইমধ্যে নির্মান খরচসহ দুই লক্ষ টাকা উঠে গেছে। খরচ উঠার পরেও ৩ এপ্রিল বুধবার যাতায়াতকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে অভিযুক্তরা।
অভিযুক্তদের মধ্যে মো. শরীফুল, আরিফুল, রইছ উদ্দিন ও আতাব উদ্দিন তারা বলেন, আমরা শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের কাছ থেকে কোন অর্থ নেই না। তবে ব্রীজটি ভবিয্যত মেরামত ও সংস্কারের জন্য শুধু মালামাল বহনকারীদের কাছ থেকে নাম মাত্র কিছু নিয়ে থাকি।
কলামাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগটি পাবার সাথে সাথেই জনস্বার্থে ঘটনাস্থলে থানার ডিউটি অফিসারকে পাঠানো হয়েছে।
কলমাকান্দা থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন , ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share & Like
Share & Like